অনুগল্পঃ গল্প হলেও সত্যি



হটাৎ বজ্রপাতের শব্দে চমকে উঠলো আসিফ। ঢ্যাবঢ্যাব চোঁখে মারিয়ার দিকে অনেকক্ষণ তাঁকিয়ে থেকেও কোনো কিছু বুঝতে না পেরে অবশেষে নিলজ্জের মতো প্রশ্ন করেই ফেললো। 


আসিফ - কি হইছে মারিয়া? এত সুন্দর আবহাওয়ায় হটাৎ বজ্রপাত হলো কোথায়?


রাগে দাঁত কিটমিট করতে করতে,

মারিয়া - আমি তোমাকে চড় দিছি। আমার তো মনে চাচ্ছে আরো কয়েকটা লাগিয়ে দেই। তুমি একটা অসয্য, বেয়াদব, ছাগল। এক ঘন্টা হইলো আমরা ডেটে আসছি। সেই প্রথমে জিজ্ঞাস করলা কেমন আছো?, তারপর থেকে কি যেনো ভাবতেছো। আমি কত প্রশ্ন করি কোনো উত্তর নাই। আমাকে কি তোমার পাগল মনে হয়? তোমার মতো আরো কয়টা ছেলের সাথে আমার সিডিউল দেওয়া জানো? তোমার একঘন্টা সময় শেষ। তাই বিদায় জানানোর আগে জানান দিয়ে গেলাম।


অতঃপর আবার আসিফের ঢ্যাবঢ্যাব চোঁখ এবং মারিয়ার প্রস্থান।


মন খারাপ করে বাসায় এসে বিছানায় বসে চোঁখ বন্ধ করে ইকটু রিলেক্স হওয়ার আগেই আবারো বজ্রপাত। এবার আর বুঝতে সমস্যা হয় নাই যে চড়টা তার প্রিয়তম স্ত্রী মিস. সামিয়া হাসানই দিয়েছেন। 


আজকাল কি যেনো একটা সমস্যা হয়েছে আসিফের। বিষয়টা খেয়াল করেছেন মি. আসিফ হাসানের স্ত্রী, মিস. সামিয়া হাসান। মনে মনে ভাবতে লাগলো "লোকটাকে সময় দেওয়া দরকার। দীর্ঘদিন টানা অফিসের কাজে হয়তো বিরক্ত হয়ে গেছে। আসিফকে বলে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ইকটু সাজেক ঘুরে আসা যায় কি না সে বিষয়ে আজকেই কথা বলতে হবে। উনার তো মন ভালো হবেই সাথে হাজার খানেক ছবি তুলে কয়েকবছর ফেসবুকে আপলোড ও করা যাবে"। ভাবতেই খুশিতে মনটা ভরে উঠলো।


হটাৎ ফোনে রিং পড়তেই,

- হ্যালো,

- - হ্যালো ভাবি, আমি আপনাদের পাশের ফ্লাটের নিরবের মা। আজকে আমি আর আপনার ভাই ইকটু রেস্টুরেন্ট গেছিলাম বিকেলে ইকটু খাবার খাওয়ার জন্য। রেস্টুরেন্ট এ ঢুকতেই দেখি আপনার স্বামীর সাথে আরেকটা মেয়ে। মেয়েটা আপনার স্বামীকে কি যে পিডান পিডাইলো। চড়, থাপ্পর, লাথতি করো কত কিছু। আমি আপনাদের আপন মানুষ দেখে ইকটু জানিয়ে রাখলাম। আপনি থাকতে আরেকজন মেয়ে কেনো আপনার স্বামীকে চড়, লাতথি দিবে? আমার একটা কোচিং সেন্টার আছে। নাম হচ্ছে "স্বামী সোজা করুন কোচিং সেন্টার"। এইখানে ভর্তি হয়ে যান। আপনার জন্য আমি স্পেশাল ৫০% ডিসকা....

বলার আগেই রাগে ফোন কেটে দিলো মিস. সামিয়া হাসান। 


তোমার মতো একটা খারাপ লোকের সাথে আমি দুইবছর ধরে সংসার করতেছি সেটা ভাবতেই নিজের প্রতি ঘৃণা চলে আসতেছে। আমি অলরেডি ফেসবুকে আমার রিলেশন স্টাটাস ডিভোর্স দিয়ে দিছি এবং চ্যাক ইন বাপের বাড়ি দিয়ে একটা পোষ্ট ও দিয়ে দিছি। আমি চলে যাচ্ছি বাপের বাড়ি।


আবারো ঢ্যাবঢ্যাব চোঁখ এবং প্রাণপ্রিয় স্ত্রী মিস. সামিয়া হাসানের বিদায়।


এমনিই অফিসের প্যেরা। অফিসের তিন তিনটা প্রজেক্ট জমা দেওয়ার ডেট দুই দিন পর। ভেবেছিলো ফেসবুকের তিনমাস ধরে প্রেম করা প্রেমিকা, মারিয়ার সাথে ইকটু ডেট করে হয়তো মনটা ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু ডেটে গিয়ে কখন যেনো মাথার মধ্যে প্রোজেক্ট এর চিন্তা ঢুকে গেলো বুঝতেই পারলো না। তার উপরে আজকে এত ঝড় গেলো নিজের উপরে। নাহ, আর ভালো লাগতেছে না। "ব্রোকেন এঞ্জেল" গানটা শুনতে শুনতে ফেসবুকে একটা স্টাটাস দিলো আসিফ "ফিলিং নলনি, আজ আমার মন খারাপ।আমাকে কেউ বুঝলো না। কেউ ভালোবাসালো না। হয়তো আমি এখন আত্মহত্যা করতে পারি।" দশ মিনিট হয়ে যাওয়ার পর ও কেউ কমেন্ট, রিয়েক্ট না করায় মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। হটাৎ টুং করে শব্দ, ইশিতা রহমান নামের এক আইডি থেকে ম্যাসেজ "আপনার কি হয়েছে ভাইয়া? আমি থাকতে আপনার আত্মহত্যা করা লাগবে কেনো? আমি আছিনা? আমাকে আপনার সকল কথা শেয়ার করেন। আশা করি আমি আপনার সকল সমস্যার সমাধান করে দিতে পারবো" 


আসিফ - তোমার মতো ভালো মনের মেয়ে এ পৃথিবীতে আছে দেখেই এখনো আমার মতো অনেক যুবকরা পৃথিবীতে বেঁচে আছে। তোমার ম্যাসেজটা পড়ার সাথে সাথেই আমার আত্মহত্যা করার মুড চলে গেছে। আমাকে আত্মহত্যা থেকে বাঁচানোর জন্য তুমি ট্রিট প্রাপ্য। বলো, কোন রেস্টুরেন্ট ট্রিট নিবা?


টানা কয়েকবার বজ্রপাত এবং লাঠি হাতে নিয়ে মাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখেই বজ্রপাতের রহস্য উম্মোচন হলো। "তুমি ইন্ডিয়ান নাটকের ফ্যান বলে কি বারবার বজ্রপাত ঘটাতে হবে নাকি?" এই কথাটা বলতে গিয়েও আরো কয়েকবার বজ্রপাতের আশঙ্কা হওয়ায় চুপ থাকাটাই শ্রেয় মনে হলো।


"ভাত নিয়ে বসে আছি এক ঘন্টা হইলো, সারাদিন লেখালেখি। বাংলায় ফেল কইরা লেখক হয়ে গেছো একদম। ডাবল ডিম খাওয়া লেখক। আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন।"


লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ